হজ উপদেশ

হজ উপদেশ

একটি কথাই মনে রাখো…

 

হজে লাখো মানুষ আসে।
কিন্তু সবাই হাজী হয়ে ফিরে না।
কারও কেবল দেহটা আসে, আত্মাটা দুনিয়াতেই পড়ে থাকে।
তুমি সে হাজী হও, যে নিজের জিহ্বা নিয়ন্ত্রণ করে, চোখ নামিয়ে রাখে, রাগ গিলে ফেলে।
এমন কিছু কথা কানে আসে মাহমুদ সাহেবের।

 

মাসজিদুল কুবায় সিরিয়ান এক মোল্লার পাশ দিয়ে দাওয়াতের সময় সেখানকার এক শায়েখের মুখে এমন কিছু মূল্যবান কথা শুনতে পান মাহমুদ সাহেব। জীবনের কষ্টে উপার্জিত অর্থ-সম্পদ দিয়ে তিনি আল্লাহর ঘর জিয়ারত করতে এসেছেন।

 

উনার কাছে হজ মানে শুধু নামের পাশে “হাজী” ট্যাগ লাগানো না।
তিনি চান, আল্লাহর খাতায় উনার নাম একজন হাজী হিসেবে লেখা হোক।
তিনি চান, একটি হজ্জে মাবরুরের সওয়াব তাঁর আমলনামায় লেখাতে।
তিনি প্রতিদান চান কেবল আল্লাহর কাছে।

 

ফজরের পরের এই আলোচনা সারাদিন তাঁর মাথায় ঘুরে।
ইশার পর সারাদিনের ব্যস্ততা শেষে তিনি কুরআন তিলাওয়াত করছিলেন।
হঠাৎ লক্ষ করলেন—সকালের সেই সিরিয়ান শায়েখ বসে বসে দোআ করছেন।
মাহমুদ সাহেব একপ্রকার দৌড়ে ছুটে গেলেন তাঁর কাছে, গিয়ে বসে রইলেন শায়েখের পিছে।
উদ্দেশ্য ছিল, কথা বলবেন তাঁর সাথে। অনেকক্ষণ মাহমুদ সাহেব অপেক্ষা করলেন পেছনে বসে। শায়েখ দীর্ঘ দোআ করলেন, ডুকরে ডুকরে কাঁদলেন। অবশেষে দোআ শেষে শায়েখ মুখ ফিরিয়ে দেখলেন, মাহমুদ সাহেব বসে আছেন।

 

মাহমুদ সাহেব সালামের উত্তর দিলেন। বললেন, “শায়েখ, আমার কিছু কথা ছিল। আজ সকালে আপনার মুখ থেকে কিছু মূল্যবান কথা শুনেছিলাম। হজের কবুলিয়াত নিয়ে যদি কিছু শেয়ার করতেন আমার সাথে…”

 

শায়েখ গভীর দৃষ্টিতে তাকালেন। তারপর এমনভাবে কথা শুরু করলেনঃ
“অনেক বছর আগে, আমার পরিচিত একজন লোক হজে গিয়েছিল। নাম তার মূসা।
খুবই ধার্মিক, নিয়মিত মসজিদে আসে।
সে হজ থেকে ফিরে এসেই কাঁদতে শুরু করল। বললঃ 


‘শায়েখ, আমি বুঝতে পারছি না, হজ করেছি ঠিকই, কিন্তু মনে শান্তি নেই।
মনে হচ্ছে, কিছু একটা হারিয়ে গেছে…’”

 

শায়েখ একটু থামলেন। মাহমুদ সাহেবের চোখে আগ্রহ।

 

“তখন আমি তাকে তিনটা প্রশ্ন করেছিলামঃ 

 

১. তুমি কি হজে গিয়ে ‘রফাস’-এ জড়িয়ে পড়েছিলে?
সে লজ্জায় মাথা নিচু করল। বলল, ‘একদিন এক বোনকে দেখে ফেলেছিলাম… চোখ ফিরিয়ে নিতে দেরি হয়েছিল।’

২. তুমি কি ‘ফুসূক’ করেছিলে?
সে বলল, ‘একদিন রাগ করে একজন কর্মচারীকে বকাঝকা করেছিলাম। ছোট একটা ভুল ছিল, তবুও সহ্য হয়নি।’

৩. তুমি কি ‘জিদাল’ করেছিলে?


সে বলল, ‘বাসে জায়গা নিয়ে এক হজযাত্রীর সাথে ঝগড়া লেগে গিয়েছিল… আমি চুপ থাকতে পারিনি।’ তারপর শায়েখ বললেনঃ “এই তিনটা জিনিসই হজকে বাতিল করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট।

রফাস মানে—বেহায়াপনা, অশ্লীল ইঙ্গিত, চোখের অসংযম।

ফুসূক মানে—আল্লাহর সীমা অতিক্রম করে গুনাহ করা।

জিদাল মানে—তর্কের নেশায় পড়ে যাওয়া, নিজের কথাকে জিতিয়ে দেওয়ার প্রবণতা।

 

আল্লাহ তো বলেই দিয়েছেন—

‘হজ্ব হলো নির্ধারিত কয়েকটি মাসে।
যে কেউ এ সময় হজের নিয়ত করে, তার জন্য হজের সময় যৌনাচার, গুনাহ ও ঝগড়া-বিবাদ করা বৈধ নয়।’

[সূরা আল-বাকারা, ২:১৯৭]

 

এগুলো থেকে বাঁচতে না পারলে, হজ শুধু দুনিয়াবি একটা ট্রিপ হয়ে যায়—
রূহানিয়াতের সফর হয়ে ওঠে না। শেষে শায়েখ বললেনঃ 


“তোমরা যাচ্ছো বাইতুল্লাহর মেহমান হয়ে।
সেখানে গিয়েও যদি চোখ না ঝুঁকে, জিহ্বা না থামে, অন্তর না বদলায়—
তাহলে হজ শুধু একটা আনুষ্ঠানিকতা হয়ে থাকবে।

 

আল্লাহর খাতায় ‘মাবরুর’ হজে নাম লিখাতে হলে,
আগে এই তিনটা ভুল থেকে নিজেকে মুক্ত করতে হবে।”

Back to blog