জিলহজ্জের প্রথম দশ দিনের আমল: ১ম পর্ব

জিলহজ্জের প্রথম দশ দিনের আমল: ১ম পর্ব

জিলহজ্জের প্রথম দশ দিন এমন এক মর্যাদার সময়, যা আল্লাহ তাআলা বিশেষভাবে সম্মানিত করেছেন।

রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন:

“আল্লাহর দৃষ্টিতে এই দিনসমূহের চেয়ে মর্যাদাপূর্ণ দিন আর নেই। আর এই দিনগুলোতে করা ইবাদতের চেয়ে প্রিয় কোনো ইবাদাত নেই। সুতরাং এই দিনগুলোতে বেশি বেশি করে তাহলিল, তাকবির ও তাহমিদ আদায় করো।” (আহমাদ ও আত-তাবারানী; হাদীসটি আব্দুল্লাহ ইবনু উমার রা. থেকে বর্ণিত)

 

এই সময়ে আমাদের করণীয়:

 

১. আল্লাহর যিকির করা

এই দিনগুলোতে আল্লাহর যিকির করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চারটি যিকির বিশেষভাবে করা যেতে পারে:

  • তাহলিল:
    لَا إِلٰهَ إِلَّا الله
    (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্)
    “আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই।” 
  • তাকবির:
    اللهُ أَكْبَر
    (আল্লাহু আকবার)
    “আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ।” 
  • তাহমিদ:
    الْحَمْدُ لِلَّه
    (আলহামদুলিল্লাহ্)
    “সব প্রশংসা আল্লাহর জন্য।” 
  • তাসবিহ:
    سُبْحَانَ الله
    (সুবহানাল্লাহ্)

“আল্লাহ পবিত্র, সকল অপূর্ণতা থেকে মুক্ত।”

 

 

২. ইস্তিগফার করা

নিজের জন্য, পরিবার-পরিজনের জন্য এবং সমগ্র উম্মাহর জন্য ইস্তিগফার করা। রাসূল ﷺ বলেন: “কেয়ামতের দিন যার আমলনামা তাকে খুশি করবে, সে যেন বেশি বেশি ইস্তিগফার করে।” (সহীহ বর্ণনা)

একটি সংক্ষিপ্ত ও ব্যাপক দোয়া:

أَسْتَغْفِرُ الله (আস্তাগফিরুল্লাহ)“আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই।”

আর উম্মাহর জন্য দোয়া হিসেবে পড়া যেতে পারে:

اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِلْمُؤْمِنِينَ وَالْمُؤْمِنَاتِ (আল্লাহুম্মাগফির লিল মু’মিনিনা ওয়াল মু’মিনাত)
“হে আল্লাহ! মুমিন পুরুষ ও নারী সকলকে ক্ষমা করে দিন।”

রাসূল ﷺ বলেন, “যে ব্যক্তি সমস্ত মুমিনদের জন্য ইস্তিগফার করবে, তার জন্য উম্মাহর প্রতিটি সদস্যের পক্ষ থেকে নেকি লেখা হবে।” (তাবারানী, মুজামুল কাবীর)

 

৩.  রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর প্রতি দরুদ ও সালাম পাঠ করা

রাসূল ﷺ-এর প্রতি দরুদ পাঠ করা শুধুমাত্র একটুকরো শব্দ নয়, বরং তা এক মহান ইবাদাত।

রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন: “তোমরা যেখানে-ই থাকো, যতবার আমার ওপর সালাম পাঠ করো, একজন ফেরেশতা আমার কাছে এসে তা পৌঁছে দেয়।” (আবু দাউদ, মুসনাদে আহমাদ)

আরো এসেছে:

“তোমরা যখন আমার ওপর দরুদ পড়ো, তখন একজন ফেরেশতা তোমার হয়ে আমার নিকট এসে বলে— ‘অমুক ব্যক্তি আপনাকে সালাম জানিয়েছে।’”

এতটুকুতেই থেমে থাকে না। আপনি যখন রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর ওপর দরুদ পাঠ করেন, তখন একজন ফেরেশতা আপনার ওপর সালাম পেশ করে! আর ফেরেশতার সালাম মানে কী একবার চিন্তা করুন তো! 

আল্লাহর কাছে আপনার জন্য দোয়া করা। সুবহানাল্লাহ! এ কেমন অনুপম লাভ, কতখানি অমূল্য বিনিময়!

 

৪) সহীহ হাদীসে প্রমাণিত তাসবীহসমূহ পাঠ করা

এই তাসবীহগুলো সারাবছরই মুমিনের সাথী হওয়া উচিত। তবে জিলহজ্জের এই বিশেষ দিনগুলোতে এগুলোর গুরুত্ব আরও বেড়ে যায়।

কখন পড়বো?

  • গাড়িতে বসে কাজে যাওয়ার সময়, 
  • অফিস থেকে ফিরার পথে, 
  • বাজারে লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করার ফাঁকে, 
  • এমনকি কোনো সামান্য অবসর পেলেই— তখনই আল্লাহর যিকির করা উচিত। এই অভ্যাস মুমিনের পরিচয়।

 

তাসবীহ পাঠের অন্তরঙ্গতা ও গুরুত্ব

আবু হামজা আল-বাগদাদি (রহ.) একটি অনন্য উপলব্ধি আমাদের সামনে তুলে ধরেন:

“আপনার পক্ষে এটা দাবি করা অসম্ভব যে আপনি আল্লাহকে ভালোবাসেন কিন্তু তাঁর প্রশংসায় আপনার জিহ্বা সজীব নয়।


আর এটা অসম্ভব যে আপনি একনাগাড়ে আল্লাহর যিকির করছেন কিন্তু তার মিষ্টতা এই জীবনে অনুভব করছেন না।


আর এটা আরও অসম্ভব যে আপনি আল্লাহর যিকিরে সেই মিষ্টতা অনুভব করছেন কিন্তু তারপরও আপনি দুনিয়ার অন্য কিছুর প্রেমে মগ্ন হয়ে যাচ্ছেন।”

 

যারা যিকির করে না: 

আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে মুনাফিকদের সম্পর্কে বলেন: “তারা যখন সালাতে দাঁড়ায়, তখন দাঁড়ায় শিথিলভাবে, লোক দেখানোর জন্য। আর তারা খুব কমই আল্লাহকে স্মরণ করে।” (সূরা আন-নিসা, ৪:১৪২)


আল্লাহ এখানে মুনাফিকদের বৈশিষ্ট্য বলছেন যে, তারা “অল্প যিকির করে”। তাহলে যারা যিকির-ফিকির একেবারেই করে না, তারা কোন শ্রেণির মধ্যে পড়লো?

রাসূলুল্লাহ বলেছেন, “যারা শুধু আল্লাহর জন্যই সিয়াম রাখে, প্রত্যেক দিনের সিয়ামের জন্য জাহান্নাম থেকে এমন এক পরিখা সমান দূরত্ব দূরে সরে যাবে, যা কিনা আসমান আর জাহান্নামের দূরত্বের সমান।”

 

তাহলে চিন্তা করুন এই দিনগুলোতে সিয়াম রাখলে জাহান্নাম থেকে আপনার দূরত্ব কতখানি হয়ে যাবে। সিয়াম রাখার পুরস্কার হল এই যে, আল্লাহ আযযাওয়াজাল জান্নাতিদেরকে বলেন, 

 

كُلُوا وَاشْرَبُوا هَنِيئًا بِمَا أَسْلَفْتُمْ فِي الْأَيَّامِ الْخَالِيَةِ

“তোমরা আনন্দের সাথে খাও ও পান কর, সেই (সৎকর্মসমূহের) প্রতিদানে, যা তোমরা অতীত দিনে করে গিয়েছিলে।”  সূরা হাক্কাহ (৬৯:২৪)

 

অতীতে তোমরা যা কিছুই আগে প্রেরণ করেছো, তার জন্য স্বাচ্ছন্দ্যে খাও এবং পান কর। আর একজন সিয়াম পালনকারী সিয়াম ভাঙ্গার পূর্বমুহুর্তে একটি মাকবুল দুআ তথা কবুল হয় এমন দুআও পুরষ্কার হিসেবে পেয়ে থাকে। অন্যসব আমলে আল্লাহ আযযাওয়াজাল সওয়াব বৃদ্ধি করেন সাত গুণ থেকে সাতশ গুণ পর্যন্ত; একমাত্র সিয়াম এর ব্যতিক্রম। কেননা আল্লাহ আযযাওয়াজাল বলেছেন যে সিয়াম তাঁর এবং কেবলমাত্র তাঁরই জন্য। আমরা তো জানি সিয়াম আল্লাহর জন্য, সলাত আল্লাহর জন্য, যিকর আল্লাহর জন্য; সমস্ত ইবাদাতই আল্লাহর জন্য। কিন্তু কেন আল্লাহ আযযাওয়াজাল সিয়ামের বিষয়টিই নির্দিষ্ট করে শুধু তাঁর জন্য করলেন? আপনার কী মনে হয়? 

 

এর কারণ হল এই যে, সিয়াম এমন এক গোপন ইবাদাত যেখানে এর প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে আল্লাহ্ হাড়া অন্য কেউই জানে না, কেউই জানে না আপনি কি সত্যিই সিয়াম ছিলেন নাকি ভান করে ছিলেন। আর তাই আপনার সিয়ামের জন্য আল্লাহ আযযাওয়াজাল স্বয়ং প্রতিদান দেবেন। 

 

ইব্রাহিম বিন হানী তাঁর মৃত্যুর সময় সিয়ামরত ছিলেন। মৃত্যুশয্যায় তিনি তৃষ্ণার্ত হয়ে যান। আর তাই তার পুত্র পানি নিয়ে এসে পিতাকে পান করতে বললেন। ইব্রাহিম জিজ্ঞেস করলেন, “মাগরিব কি হয়েছে?” ছেলে বলল “না।” বাবা বললেন, “এরকম একটি দিনের জন্যই তো মানুষ আমল করে থাকে।

 

নাফিসাহ বিনতে হাসান বিন জাইদ; এই মহিয়সী নারীও তাঁর মৃত্যুশয্যায় সিয়ামরত ছিলেন। তাঁর পুত্র তাঁকে 

জোর করে খাওয়াতে চেষ্টা করলে তিনি বলেছিলেন “সুবহানাল্লাহ! আমি ৩০ বছর ধরে আল্লাহর কাছে সিয়ামরত অবস্থায় মৃত্যুর জন্য প্রার্থনা করছি, আর তুমি কিনা এখন আমার সিয়াম ভাঙতে চাইছো?” তিনি এই আয়াতটি তিলাওয়াত করতে করতে মারা গেলেন-

 

قُل لِّمَن مَّا فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ ۖ قُل لِّلَّهِ ۚ كَتَبَ عَلَىٰ نَفْسِهِ الرَّحْمَةَ ۚ لَيَجْمَعَنَّكُمْ إِلَىٰ يَوْمِ الْقِيَامَةِ لَا رَيْبَ فِيهِ ۚ
সূরা আন‘আম (৬:১২)

“বলুন, নভোমণ্ডল ও ভূ-মণ্ডলে যা কিছু আছে, সেগুলোর মালিক কে? বলুন, ‘আল্লাহ।’ তিনি নিজের প্রতি দয়া আবশ্যক করে নিয়েছেন। তিনি অবশ্যই তোমাদেরকে কিয়ামতের দিনে একত্রিত করবেন—এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।”

 

৫) যথাসম্ভব সাদাকাহ করা 

যদিও সারা বছর জুড়েই আমাদের সাদাকাহ করা উচিত, তবে জিলহজ্জের প্রথম দশ দিনে আমাদের প্রত্যেকের আরও বেশি করে আল্লাহর রাস্তায় সাদাকাহ করা উচিত। আল্লাহ আযযাওয়াজাল বলেন, 

وَمَا أَنفَقْتُم مِّن شَيْءٍ فَهُوَ يُخْلِفُهُ ۖ وَهُوَ خَيْرُ الرَّازِقِينَ

 

তোমরা যা কিছুই ব্যয় করো (আল্লাহর রাস্তায়), তিনি তার প্রতিফল দেন, আর তিনিই সর্বোত্তম প্রতিদানকারী। [সূরা সাবা ৩৪:৩৯] 

 

ইবনু কাসির (রহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, আল্লাহ তা’লা দানশীল মুমিনদেরকে এই জীবনে করা সাদাকাহের জন্য আখিরাতে তার দানের সমপরিমাণ বা তারও অধিক প্রতিদান দিবেন। ইবনু উমার (রদিআল্লাহু আনহু) যখন আল্লাহর এই আয়াত শুনলেন, 

 

لَن تَنَالُوا الْبِرَّ حَتَّى تُنفِقُوا مِمَّا تُحِبُّونَ وَمَا تُنفِقُوا مِن شَيْءٍ فَإِنَّ اللَّهَ بِهِ عَلِيمٌ 

তোমরা যা ভালোবাস, তা থেকে ব্যয় না করা পর্যন্ত কখনোই তাকওয়া অর্জন করতে পারবে না; আর তোমরা যা থেকেই ব্যয় করে থাক, আল্লাহ তা সম্পর্কে সম্যক অবগত। 

 

আয়াতটি শোনার পর ইবনু উমার (রদিআল্লাহু আনহু) আশেপাশে তাকালেন এবং তাঁর মালিকানাধীন এক দাসীর চেয়ে অধিক ভালোবাসার আর কিছু পেলেন না। আর তাই তিনি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য তখনই সেই দাসীকে আজাদ করে দিলেন। 

 

সাঈদ বিন উবাদাহ প্রতিদিন মাসজিদের ৮০ জন দরিদ্র মুসলমানকে খাওয়ানোর জন্য তাঁর ঘরে নিয়ে যেতেন। তাঁর পুত্রও উত্তরাধিকার সূত্রে আল্লাহর রাস্তায় উদারভাবে ব্যয় করার গুণটি পেয়েছিলেন। তাঁর পুত্রের নাম ছিল কায়িস বিন সাঈদ বিন উবাদাহ। তিনি যখন ধনী ছিলেন তখন তিনি লোকদেরকে ঋণ দিতেন। 

 

একবার তিনি দারুণ অসুস্থ হয়ে পড়েন। কিন্তু লোকেরা তাঁকে দেখতে যাওয়া থেকে বিরত থাকল। কারণ বেশিরভাগই তাঁর কাছ থেকে ঋণ নিয়েছিল আর ভেবে বসেছিল যে তিনি হয়তো সে সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করবেন। কায়িস যখন এই ব্যাপার জানতে পারলেন, তখন তিনি ঘোষণা করলেন, “ভ্রাত্বত্বের পথে যে ধনসম্পদ বাধা হয়ে যায়, সেই সম্পদ ধ্বংস হোক। আমি তাদের সবার ঋণ মাফ করে দিলাম?”

 

৬) কুরআন তিলাওয়াত 

 

কুরআন তিলাওয়াত তো এই দশ দিন ছাড়াও প্রতিদিনের অভ্যাস হওয়া উচিত। কুরআন তিলাওয়াতকারী বান্দারা আল্লাহ আযযাওয়াজালের নিকট বিশেষ মর্যাদার অধিকারি। নাবি কুরআন তিলাওয়াতের নির্দেশ দিয়েছেন এবং বলেছেন যে ‘আলিফ-লাম-মীম’ একটি বর্ণ নয় বরং আলিফ হল একটি বর্ণ, লাম একটি বর্ণ এবং মিম একটি বর্ণ। আর প্রত্যেকটি বর্ণের জন্য তিলাওয়াতকারীর জন্য রয়েছে দশটি করে হাসানাত। সুতরাং আপনি কেবল আলিফ-লাম-মীমের জন্যই ত্রিশটি হাসানাত পেয়ে যাবেন।

 

আসমাকে (রদিআল্লাহু আনহা) জিজ্ঞেস করা হয়েছিল যে কুরআন তিলাওয়াতের সময় রাসূলুল্লাহর সাহাবারা কীরূপ অবস্থায় থাকতেন। তিনি বলেছিলেন যে তাঁদের চোখ কান্নায় ভিজে যেত আর পেশিগুলো জর্জরিত হয়ে যেত; ঠিক যেমনটা আল্লাহ আযযাওয়াজাল বলেছেন, 

 

اللَّهُ نَزَلَ أَحْسَنَ الْحَدِيثِ كِتَهُ مُتَشَبِها مَثَانِي تَقْشَعِرُّ مِنْهُ جُلُودُ الَّذِينَ يَخْشَوْنَ رَبِّهِمْ ثُمَّ تَلِينُ جُلُودُهُمْ وَقُلُوبُهُمْ إِلَى ذِكْرِ اللَّهِ ذَلِكَ هُدَى اللَّهِ يَ دِي بِهِ مَن يَشَاءُ وَ مَن يُضْلِلِ اللَّهُ فَمَا لَهُ مِنْ هَادٍ 

 

আল্লাহ সর্বোত্তম বাণী অবতীর্ণ করেছেন—একটি কিতাব, যা পরস্পর সাদৃশ্যপূর্ণ, বারবার পুনরাবৃত্ত। এতে তাদের চামড়া শিহরিত হয়, যারা তাদের প্রতিপালককে ভয় করে। অতঃপর তাদের চামড়া ও অন্তর আল্লাহর স্মরণে নম্র হয়। এটি আল্লাহর পথনির্দেশ—তিনি যাকে ইচ্ছা তা দ্বারা সৎপথে পরিচালিত করেন। আর আল্লাহ যাকে বিভ্রান্ত করেন, তার কোনো পথপ্রদর্শক নেই।

 

ইবনু মাসউদ (রদিআল্লাহু আনহু) বলেছিলেন, “আমাদের জন্য কুরআন হিফজ করা ছিল কঠিন, তবে মেনে চলা ছিল সহজ। তবে এমন একসময় আসবে যখন হিফজ করা হবে সহজ, কিন্তু এটি মেনে চলা সহজ হবে না?’ 

আর এখন তো আমরা এমন এক সময়ে আছি যখন কুরআন হিফজেরও অভাব, কুরআনের আনুগত্যেরও অভাব। 

 

মুজাহিদকে (রহিমাহুল্লাহ) একবার দুই ব্যক্তির ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল; যাদের একজন আল-বাকারাহ আর আলি-ইমরান তিলাওয়াত করেছে এবং অপরজন একই সময় নিয়ে কেবল আল-বাকারাহ তিলাওয়াত করেছে। তাহলে এদের মধ্যে কে উত্তম? তিনি উত্তর দিলেন, “উত্তম তিনি যিনি একই সময়ে শুধু আল-বাকারাহ তিলাওয়াত করেছেন; কারণ তিনি এর অর্থ অনুধাবনের জন্য বেশি সময় পেয়েছেন।” 

আমরা সবাই তো রাসূলুল্লাহকে ভালবাসি এবং শেষ বিচারের দিন তাঁকে দেখার ইচ্ছা করি। তাহলে ভাবুন কী হবে, যদি তিনি আপনার সম্পর্কে আল্লাহ আযযাওয়াজালের নিকট এই আয়াতটির মাধ্যমে অভিযোগ করে থাকেন, 

وَقَالَ الرَّسُولُ يَنرَبِّ إِنَّ قَوْمِي اتَّخَذُوا هَذَا الْقُرْءَانَ مَهْجُورًا 

এবং রাসূল বলবেন, ‘হে আমার রব! আমার জাতির লোকেরা

 

এই কুরআনকে পরিত্যক্ত গণ্য করেছিল। 

 

ইবনুল কাইয়্যিম (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, “কুরআনকে পরিত্যাগ করা হয় ৫ উপায়েঃ 

১। কুরআন তিলাওয়াত শোনা পরিত্যাগ করা, 

২। কুরআনের হালাল-হারাম তথা বিধিবিধান পরিত্যাগ করা, 

৩। ছোট-বড় যেকোনো কলহ-বিবাদের ক্ষেত্রে কুরআনের দিকে প্রত্যাবর্তন না করা, 

৪। কুরআনের ব্যাপকতা ও বোধগম্যতা ত্যাগ করা, 

৫। অসুস্থ হৃদয় নিরাময়ের জন্য কুরআনের ব্যবহার ত্যাগ করা। (হতাশা এবং অসুস্থ অনুভূতি নিরাময়ে কুরআনের পরিবর্তে অন্যান্য উপায় অবলম্বন করা)”

 

৭) অবিরত এবং অবিচলভাবে দুআ করতে থাকা 

 

যে ব্যক্তি দুআ করে না, সে আল্লাহর ক্রোধের শিকার হয়ে যেতে পারে; কেননা রাসূলুল্লাহ বলেন, 

 

مَنْ لَمْ يَسْأَلِ اللَّهَ يَغْضَبْ عَلَيْهِ 

যে আল্লাহর কাছে চায় না, আল্লাহ তার উপর নিজের ক্রোধ চাপিয়ে দেন। 

 

যখন উলামাদেরকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, আমরা কীভাবে বুঝব যে আল্লাহ তা’লা আমাদের দুআ কবুল করবেন? তাঁদের উত্তর ছিল এমন- যখন কেউ পানিতে ডুবে যেতে থাকে আর বাঁচার জন্য মরিয়া হয়ে সাহায্য চাইতে থাকে, আল্লাহর কাছে সেভাবে চাইলে (আল্লাহ সেই দুআ কবুল করেন)। 

দুআ করবার জন্য দুআ কবুলের সময়গুলো খুঁজে বের করুন।

 

সেই সময়গুলোর অন্যতম হলঃ

১। রাতের শেষ তৃতীয়াংশ, 

২। ফরয সলাতের পূর্বে আযান ও ইকামতের মধ্যবর্তী সময়, 

৩। জুমুআর দিনে ইমাম যখন মিম্বরে অবস্থান করেন, 

৪।  বৃষ্টির সময়,

৫। সিজদাহরত অবস্থায় ইত্যাদি। 

 

দুআ শুরু করুন আল্লাহ আযযাওয়াজালের প্রশংসা এবং রাসূলুল্লাহর প্রতি দরুদ ও সালাম পেশ করে। ইস্তিগফার ও তাওবাহ করুন।

 

অতঃপর দুআ করবার সময় নিম্নের বিষয়গুলো খেয়াল রাখুনঃ 

অবিচল থাকুন এবং আল্লাহর কাছে অনবরত দুআ করতে থাকুন, 

১। দুআর সাথে অন্তরকে জুড়ে নিন, 

২।  অজু অবস্থায় থাকুন, 

৩। দুআর আগে সাদাকাহ করুন, 

৪। যেসমস্ত সময়ে দুআ কবুল হয়, সেই সময়গুলোতে। দুআ করুন। 

 

ইমাম শাওকানি (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, “তোমার দুআ কবুল হয়েছে বলে জানবে যখন তোমার অন্তর প্রস্তুত থাকে, যখন কান্না আসে এবং অশ্রু বঝড়ে যায় আল্লাহর জন্য, যখন দুআয় তুমি থাক অটল। আর সবশেষে, যখন তোমার এমন অনুভূতি হয় যে কাঁধ থেকে যেন বিরাট এক বোঝা সরিয়ে নেওয়া হয়েছে?? 

 

রাসূলুল্লাহ বলেন, 

 

مَا مِنْ عَبْدِ بَاتَ عَلَى طُهُورٍ ثُمَّ تَعَارَ مِنَ اللَّيْلِ فَسَأَلَ اللَّهَ شَيْئًا مِنْ أَمْرِ الدُّنْيَا أَوْ مِنْ أَمْرِ الْآخِرَةِ إِلَّا أَعْطَاهُ 

এমন কেউই নেই যে কিনা পবিত্র অবস্থায় ঘুমোতে যায়, অতঃপর গভীর রাতে উঠে এই দুনিয়া বা আখিরাতের জন্য উত্তম কিছু চায়, অথচ আল্লাহ সুবহানাহুতা’লা তা পূর্ণ করেন না। [সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৭৬৯] 

Back to blog